আজকের আলোচনার বিষয়ঃ সংসদীয় বিতর্কের বিষয়বস্তু (সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা), বিশ্লেষণ কৌশলপত্র
সংসদীয় বিতর্কের বিষয়বস্তু (সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা), বিশ্লেষণ কৌশলপত্র
১. বিল সংক্রান্ত ধারা-
ক. সেই সব বিষয়বস্তু বিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য পাবে যেগুলো সরকারি দল সংসদে আইন হিসেবে পাশ করাতে চায় (যেমনটি সত্যিকার সংসদে হয়)।
খ. বিলের দ্বান্দ্বিক আবেদন থেকে বাস্তবধর্মী প্রায়োগিক আবেদনটিই মূখ্য।
গ. সে বিষয়গুলোই বিলের মর্যাদা পেতে পারে যেগুলো ‘হোক’ অথবা ‘উচিত’ শব্দমালা দিয়ে শেষ হয় ।
ঘ. উদাহরণ
- শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড প্রদান রহিত করা হোক।
- অর্থনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশের অবিলম্বে গ্যাস রপ্তানি করা উচিত।
২. কোন বিতর্কের বিষয়কে একবার বিল হিসেবে উত্থাপিত করলে-
ক. পুরো বিতর্কে বিষয়বস্তুকে বিল হিসেবে উচ্চারণ করতে হবে। পুনরায় একে প্রস্তাব হিসেবে উল্লেখ করার অবকাশ নেই। তা না হলে এটি Point of Order এর আওতায় আসবে।
খ. বিল এর মূল বিশ্লেষণ হবে নির্দিষ্ট (Specified এবং Identified) কি কারণে বিল উত্থাপন করা হয়েছে এবং এটি পাস করে তার প্রভাব কি কি হবে এগুলো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করতে হবে।
গ. বিল উত্থাপন করলে এর সাথে অনেকগুলো ধারা উল্লেখ করা অত্যাবশ্যকীয় নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ধারা প্রয়োগ ভালো ফলাফল বয়ে আনে। যেমন- থ্রি হুইলার নিষিদ্ধ করা উচিত। এই বিলের উপর বিতর্কে কিছু ধারা আসেত পারে।
- থ্রি হুইলার বিকল্প সি.এস.জি চালু করা হবে।
- নতুন সি.এন.জি জ্বালানী হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হবে যার যথেষ্ট মজুদ আমাদের আছে (এবং এর সাথে কিছু তথ্য)।
- ক্ষতিগ্রস্থ চালকদের পুনর্বাসন করা হবে (কিভাবে করা হবে তার ব্যাখ্যা)। –
ঘ. ধারা সংযোজন করা যায় তখনই যখন সেগুলো ‘বিল’ এর উদ্দেশ্য ও প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা দেয়।
৩. প্রস্তাবের সংজ্ঞাঃ
যেগুলো সংসদীয় বিতর্কে ‘বিল’ হবার মত অবস্থায় থাকছে না সেগুলো সবই প্রস্তাব হিসেবে পরিগণিত। সবধরনের বিষয়ই প্রস্তাবের মর্যাদা পাবে। অন্যভাবে বললে সকল ধরনের বিল প্রস্তাবও বটে কিন্তু সকল প্রস্তাব বিল নয়।
৪. প্রস্তাবের ধরন ও বিশ্লেষণঃ
ক. তুলনামূলক অনুষঙ্গঃ
সংজ্ঞা ও উদাহরণ-
এ ধরনের বিষয়বস্তুতে দুটো মূল চলক (Variable) এর মধ্যে একটিকে অপরটির চাইতে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে প্রমানের চেষ্টা করা হয়, যেমন-
- দারিদ্র বিমোচন নয়, তথ্য প্রযুক্তির উত্তরণই একবিংশ শতকের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
- কৃষি নয়, শিক্ষাই হবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোপান
খ. প্রধান/মূল বিতর্কঃ
সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যাঃ
এধরনের বিতর্কের বিষয়ে ‘ই’ প্রত্যয় কিংবা ‘মূল’ বা ‘প্রধান’ জাতীয় শব্দ থাকে। কিন্তু এরা
কখনোই একমাত্র বোঝায় না। যেমন-
- শিক্ষার অভাবই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান বাধা।
- যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় চরিত্রহীনতাই বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের প্রধান কারণ।
উভয় বিষয়ে ‘ই’ (প্রথমটিতে) এবং ‘প্রধান’ (দ্বিতীয়টিতে) কখনোই একমাত্র বোঝায় না। ‘ই’ প্রত্যয় ব্যবহার করা হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর উপর Emphasis করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ‘প্রধান’ ও ‘মূল’ শব্দদ্বয়ের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য ।

বিশ্লেষণ ধারাঃ
এ ধরণের বিষয়বস্তু নিয়ে বিতর্ক হলে সরকারি দলকে অবশ্যই ‘মূল’ বা ‘প্রধান’ কারণটি নিয়ে বিতর্ক করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের সুবিধাটি হল যে, তারা অন্য যে কোন কারণকেই মূল কারণ থেকে উৎসারিত হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করতে পারে। তাদের আরেকটি সুবিধা হলে-তারা বিরোধী দলের কাছে অন্য কোন ‘প্রধান’ বা ‘মূল’ অনুষঙ্গের নাম চাইতে পারে। একবার সরকারি দল প্রস্তাবটি এইভাবে উত্থাপন করলে বিরোধী দলকে অবশ্যই আরেকটি ‘মূল’ বা ‘প্রধান’ কারণ চিহ্নিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিতর্কটি আবার ঐবধফ ঃড় ঐবধফ বিতর্কে পরিণত হবে।
গ. একটি নির্দিষ্ট বক্তব্য (Statement): যেমন-
- জাতিসংঘ একটি অচল সংস্থা।
- বর্তমানে প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত। – লক্ষ্য করে দেখতে হবে এ ধরণের বিষয়বস্তুতে আগের দু’ধরণের মত কোন বাঁধাধরা Grammatical নিয়ম নেই। এখানে দু পক্ষের কোন পক্ষই নির্দিষ্ট কোন বিন্দুতে আটকা থাকতে বাধ্য নন। ‘মূল’ বা ‘প্ৰধান’ অথবা শুধুমাত্র দুটো অনুষঙ্গতেই বাঁধা হয়ে থাকতে হচ্ছে না কাউকে। এ ধরনের বিতর্ক একটু কঠিন কারণ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে বিতার্কিকের জ্ঞানের প্রয়োজন। যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান থাকলে বিষয়কে যে কোন দিকে ‘মোড় ঘোরানো” বা ÔTwist’ করানো সম্ভব। এধরনের প্রস্তাবে সরকারি দলের সুবিধাটি হচ্ছে তার বিষয়বস্তুকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করবে বিরোধী দলকেও সেভাবেই বিতর্ক করতে হবে। যেমন- ‘বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিচ্যুত’ -এই প্রস্তাবের উপর বিতর্ক করতে গেলে সরকারি দল যদি ‘বর্তমান প্রজন্ম’ বলতে ৮০’র দশকের পরবর্তী প্রজন্ম বোঝায় তবে বিরোধী দলকেও তা মেনে নিতে হবে। তাদের তখন বর্তমান প্রজন্মের Time limit পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কোনভাবেই কোন সমান্তরাল বিতর্ক শুরু করা যাবে না।
আরও দেখুনঃ