বিতর্কের সূচনা | Beginning Of Debate

বিতর্কের সূচনা কী? কিভাবে? নিয়মাবলী আজকের ভিডিওর আলোচনার বিষয় । বিতর্ক [ Debate ] এর নিয়মাবলী সহ ডিবেটের নিয়েমাবলি নিয়ে আমাদের একটি সিরিজ “বিতর্কের সহজ পাঠ [ Simple Lesson In Debate ]” সম্প্রতি প্রকাশিত হচ্ছে।

 

বিতর্কের সূচনা

 

 

বিতর্কের সূচনা : বিতর্ক বর্তমান সভ্যতা ও প্রগতির নতুন কৌশল হিসেবে বহুল প্রচলিত হলেও এর উৎপত্তি সদূর অতীতে- জ্ঞানের প্রতি মানুষের গভীর অনুরাগ তথা সত্যের অনুসন্ধান স্পৃহা থেকে। সঠিক জ্ঞান- অন্বেষণ তথা সত্যানুসন্ধানে যুক্তি-তর্কের অবতারণা বহু প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। প্রাচীন দার্শনিকগণ কোন বিষয়ের প্রকৃত জ্ঞান লাভের জন্য তথা কোন বিষয়ে মতের ভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে এর সত্যাসত্য নিরূপনের জন্য যুক্তি প্রমাণাদির কষ্ঠিপাথরে তা যাচাই করতেন।

 

বিতর্কের সূচনা

 

জ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে সৃষ্টি হয়েছে দর্শনশাস্ত্র। দর্শনের বিভিন্ন পদ্ধতি বা মতবাদ যেমন, সংময়বাদ (ঝপবঢ়ঃরপরংস), দ্বান্দ্বিকতাবাদ (উরধষবপঃরপরংস) ইত্যাদি মূলত যুক্তি-তর্ক প্রয়োগের মাধ্যমে সত্যানসন্ধানের বিশেষ প্রক্রিয়া। প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে দার্শনিক তত্ত্বে উপনীত হওয়া বা কোন বিতর্কিত বিষয়ের সত্যতা বা অসারতা প্রমাণ করা হতো এর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি প্রয়োগ ও খণ্ডনের মাধ্যমে। অতি প্রাচীনকাল থেকে সত্যানুসন্ধানে প্রচলিত এই দার্শনিক প্রক্রিয়ার বিবর্তিত রূপ আজকের ‘বিতর্ক’ নামের বুদ্ধিবৃত্তিক ও যুক্তিনির্ভর বাকিশিল্প।

বাট্রান্ড রাসেল‘সংশয়ের অনুসন্ধান’কে বলেছেন দর্শন। বিতর্কের পিছনে তাই দর্শনের প্রভাব প্রবলভাবে বিদ্যমান। গ্রীকরা তার্কিক ছিলেন। গ্রীসের কুটতার্কিক পণ্ডিতেরা সোফিস্ট নামে পরিচিত, যাদেরকে পরবর্তী দার্শনিকদের পূর্বপুরুষ বলা হয় । ‘প্রোটেগোরাস’ একজন খ্যাতনামা সোফিস্ট এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪৮১ অব্দে তিনিই প্রথম বিতর্কের সূচনা করেন। গ্রীক সোফিস্টরা,নিজেদের সংশয়কে বিতর্কের মাধ্যমে মেটাবার চেষ্টা করতেন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে mসোফিস্ট আন্দোলন শুরু হয়। তাদের আলোচ্য বিষয় ছিল মূলত জগতের উৎপত্তি ও স্বরূপ অন্বেষণ।

সোফিস্টদের পরে আসে সক্রেটিস যুগ। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ থেকে ৩২০ সাল পর্যন্ত এই যুগের সময়কাল ধরা হয়। পূর্ববর্তী সোফিস্টরা ‘প্রত্যক্ষ’কেই (ংবহংধঃরড়হ) জ্ঞানের ভিত্তি বলে মনে করতেন। সক্রেটিস ‘আপনাকে জানো’ মুলনীতির উপর ভিত্তি করে প্রথম দেখালেন যে, জ্ঞানের ভিত্তি ‘প্রত্যক্ষ’ নয়, ‘বুদ্ধি’। তিনি দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে ‘থিসিস’ (ঞযবংরং), ‘এন্টিথিসিস’ (অহঃরঃযবংরং) এবং ‘সিনথিসিস’ (ঝুহঃযবংরং) এর মাধ্যমে সোফিস্টদের কূটতার্কিক মতবাদ খণ্ডন করে নিজস্ব মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সক্রেটিসের প্রত্যয়কে ভিত্তি করে তার শিষ্য প্লেটো প্রতিষ্ঠা করেন তার ‘সামান্যবাদ’ (ঞযবড়ৎু ড়ভ ওফবধং)।

এ্যারিস্টেটল প্লেটোর সামান্যবাদকে প্রত্যাখ্যান করে ‘বিশেষ’কে (চধৎঃরপঁষধৎ) সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন এবং বিশেষ থেকে আরোহ (ওহফঁপঃরাব) পদ্ধতির সাহায্যে ‘সামান্যে’ (ঁহরাবৎংধষ) উপনীত হয়েছিলেন। প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষেও ‘ন্যায় শাস্ত্র’, ‘তর্কশাস্ত্র’ বা ‘যুক্তিবিদ্যা’ (খড়মরপ) প্রচলিত। প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারগুলিতে নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা হত। প্রায়শঃই তাদের বিষয়বস্তু ধর্মতত্বের সীমা পেরিয়ে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যাবলীকে স্পর্শ করত। মধ্যযুগে আরবদের মধ্যে ধর্মীয় ‘বাহাস’ হত। এসময়ে মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে ‘মুতাযিলা’ নামে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী একটি সম্প্রদায় (ঝপযড়ড়ষ) গড়ে উঠেছিল।

তারা ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়কে যুক্তিতর্কের কষ্ঠিপাথরে যাচাই করে গ্রহণ করতেন। এমন কি “কোরান সৃস্ট, না অলৌকিক”-এ নিয়েও তারা বিতর্ক করতে দ্বিধা করতেন না। পরবর্তীতে ইমাম গাজ্জালী (র:) এর নেতৃত্বে অতীন্দ্রিয়বাদী সুফীদের উত্থান ঘটলে এই ধারার মৃত্যু ঘটে।

ইউরোপেও বিতর্কের চর্চা হতো । তবে ফরাসী বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত তা সিিমত ছির রাজ দরবারের সৌখিন জ্ঞানচর্চায় আর বিচারকদের দরবারে। রেনেঁসা ইউরোপে আলোর দুয়ার খুলে দিলেও বিতর্কের দুয়ার সেভাবে খলতে পারেনি।বিচ্ছিন্ নবাবে দান্তে, র্মিটন প্রমুখ চেস্টা করেছেন বাইবেলের অভ্রান্ততা নিয়ে বিতর্ক তুরতে, কিন্তু বিতর্কের জোয়ার তারা তুরতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে ফরাসী বিপ্লব মুক্তি দেয় এই মুক্তধারাকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে বিতর্ক আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করেছে তার সূতিকাগার হচ্ছে যুক্তরাজ্য।

 

বিতর্কের সূচনা নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

Leave a Comment