বিতার্কিকের নবপ্রজন্ম

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ বিতার্কিকের নবপ্রজন্ম

 

বিতার্কিকের নবপ্রজন্ম
বিতার্কিকের নবপ্রজন্ম

 

বিতার্কিকের নবপ্রজন্ম

যেকোনো ধরনের পড়াশোনায় তোমরা নবপ্রজন্মের বিতার্কিকবৃন্দ যুক্ত থাকো না কেন, তোমাদের যুক্তিবোধ এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা থাকা দরকার। বিতর্ক তোমাদের মননের গভীরের সেই সামর্থ্যকে বাড়িয়ে তোলে। বিতর্ক একটা প্রেরণাদায়ী শিল্প। যুক্তি, তর্ক ও তথ্যের ব্যবহারের মাধ্যমে এই শিল্প কারও বক্তব্যের মধ্যে প্রকাশিত হয়। আর কোনো বিষয়ে মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য জ্ঞানের গভীরতা প্রদর্শনের মাধ্যমও বিতর্ক। এভাবেই এটা একটা চমৎকার শিল্পকলা, জগতের তাবৎ নেতা যার সুফল পেয়েছেন।

বিতর্ক তোমাদের যুক্তিবোধকে দিনে দিনে ধারালো করে তোলে এবং এটা তোমার জ্ঞানের ভিত্তিকে একটা আনন্দময় উপায়ে সম্প্রসারিত করে। এটা আনন্দ ও খেলার মধ্য দিয়ে তোমার স্বাস্থ্যের সমৃদ্ধির মতোই। তবে বিতর্কের চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপক। বিতর্কের কাঠামো একটি প্রতিযোগিতামূলক ধাঁচে তৈরি। সাধারণত একটা দলভিত্তিক বিতর্ক করতে হয়, যেখানে তোমাকে দলনেতা অথবা সদস্য হিসেবে বক্তব্য দিতে হয়। এভাবেই একটা প্রতিযোগিতার তাগিদে তুমি নানা রকমের তথ্য ও জ্ঞান একসঙ্গে জড়ো করার প্রেরণা পাবে। পুরো প্রক্রিয়াটা এমন ‘জাদুকরি’ যা তোমাদের জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

 

বিতার্কিকের নবপ্রজন্ম
বিতার্কিকের নবপ্রজন্ম

 

আমি ‘জাদুকরি’ শব্দটা ব্যবহার করলাম এ জন্য যে তোমরা প্রতিযোগিতা শেষে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের গভীরতা দেখে বিস্মিত হবে। বুঝতে পারবে সর্বশেষ বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছ। প্রতিযোগিতার সাত দিনে যা কিছু শিখেছ, সাত মাসেও সচরাচর সেটা সম্ভব হয় না। এ কারণেই শিক্ষাজীবনে বিতর্ক সবচেয়ে উপকারী মাধ্যম, যাতে মিথস্ক্রিয়া এবং বিচার- বিবেচনাবোধের দরকার হয়।

মাঝেমধ্যে মা-বাবা তোমাদের পড়াশোনার জন্য যে চাপ দেন, সেটা তোমাদের কাছে বোঝা মনে হতে পারে। বিতর্ক তোমার মধ্যে অভ্যন্তরীণ তাগিদ জাগিয়ে তোলে, যা তোমার মধ্যে বিস্ময়কর গতি এনে দিতে পারে। এ কারণেই আমি মনে করি এটা ‘জাদুর’ মতো কাজ করে। অবশ্য সবার মনে এটা একইভাবে কাজ করতে শুরু করে না। তবু তুমি কথা বলার প্রারম্ভিক জড়তা বা সংকোচবোধ কাটাতে বিতর্কে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারো।

 

বিতার্কিকের নবপ্রজন্ম
বিতার্কিকের নবপ্রজন্ম

 

জীবনে প্রাথমিক চাপা স্বভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য বিতর্কই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। মঞ্চে গান গাওয়াটা অবশ্যই সহায়ক, তবে বিতর্কের মতো অতটা নয়, যেখানে তুমি নিজের চর্চিত বিষয়ের পাশাপাশি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কিছু সৃষ্টি করতে পারো। এটা বিশাল আনন্দের যখন তুমি সত্যি সত্যিই করে দেখাতে পারো। আর এভাবেই তুমি ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাস নির্মাণ করতে পারো। বিতর্ক একটা বিনিয়োগ নিজের বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।

যদি তোমার স্বপ্নটা বড় হয়, যদি লক্ষ্য উন্নত হয়, অবশ্যই যেকোনো প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে তোমাকে। আর তাহলে তোমাকে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কথা বলে বিপুলসংখ্যক দর্শককে মুগ্ধ করতেই হবে। সত্যিকারের বিশ্বাস আছে এমন বিষয়ের ওপরই তোমাকে বলতে হবে। তাই বিতর্ককে তোমার জীবনের অপরিহার্য অংশ করে নিতে হবে, যা এই সমাজে যেকোনো ধরনের নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করার সহায়ক।

 

প্রথম বিতর্কটা তোমার জন্য খুব কঠিন বা দুঃস্বপ্ন মনে হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে তোমার প্রাথমিক বক্তব্যগুলোর জন্য বেশি বেশি মহড়া দরকার এবং পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের মূল্যায়নের সাহায্য নিতে হবে। চর্চা করতে করতে একটা মানুষ নিখুঁত হয়। কিছু ব্যর্থতা আসবেই। এসব কারণে হাল ছাড়বে না।

এগুলোকে সংশোধনের নির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করো । একসময় তুমি জয়ী হবেই। তবে সে জন্য তোমাকে একটা উন্নত লক্ষ্যের প্রতি অটুট আস্থা নিয়ে লেগে থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মের বিতার্কিকের প্রতি আহ্বান, তোমরা আত্মবিশ্বাসে জেগে ওঠো আর বিতর্ককে সঞ্চারিত করো চর্চায় ও সাধনায়। সাফল্য আসবে অনিবার্যভাবে।

Leave a Comment