বিতার্কিক বনাম মৌলবাদী

আজকে আমরা আলোচনা করবো বিতার্কিক বনাম মৌলবাদী

 

বিতার্কিক বনাম মৌলবাদী
বিতার্কিক বনাম মৌলবাদী

 

বিতার্কিক বনাম মৌলবাদী

ওরা দুটি ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। একজন মৌলবাদী কখনোই বিতার্কিক হতে পারেন না। কারণটা সোজা তিনি তো নিজের চিন্তার বাইরে কোনো মত বা ধারণায় বিশ্বাস করেন না। যেকোনো ধরনের মৌলবাদ অথবা বিশেষত ধর্মীয় মৌলবাদ হচ্ছে বিতর্কের মূল চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত। একজন বিতার্কিক কোনো বিষয়ে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সহমত না হতে পারেন, তবে তিনি অন্য পক্ষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সব সময় সম্মান দেখান। এখানেই একজন বিতার্কিক এবং একজন গোঁড়া ব্যক্তির আদর্শিক দ্বন্দ্ব। এভাবেই একজন বিতার্কিক সেকেলে মতবাদ এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে চিরন্তন লড়াইয়ে যুক্ত থাকেন।

একটা সমাজে বিতার্কিকদের তুলনামূলক বড় ভূমিকা পালন করতে হয়। তাঁরা একটা ধারণা যৌক্তিক উপায়ে মানুষকে গ্রহণ করতে রাজি করাতে পারেন । বিতর্কের এই প্রেরণামূলক ক্ষমতা একটা সভ্য সমাজে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি শক্তিশালী।

 

বিতার্কিক বনাম মৌলবাদী
বিতার্কিক বনাম মৌলবাদী

 

বিতর্ক যুক্তি, নৈতিকতা এবং প্রেরণাদায়ী ক্ষমতায় বিশ্বাসী। অন্যদিকে গোঁড়া মতবাদ অন্ধত্ব, অহমিকাপূর্ণ চিন্তা এবং জবরদস্তিমূলক আচরণে আটকে থাকে। কিন্তু এখনো কেবল যৌক্তিক চিন্তাভাবনা এবং বৈজ্ঞানিক দূরদৃষ্টিই গোঁড়ামির ছত্রাকতুল্য বিস্তার এবং সন্ত্রাসবাদের শাখা-প্রশাখা সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

বাংলাদেশ এখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং রাজনৈতিক মদদপুষ্ট সন্ত্রাসের একটা বড় হুমকির মুখে রয়েছে। এর কারণ যথেষ্টমাত্রায় আন্তর্জাতিকও বটে। নিজ ভূখণ্ডের বাইরে মাঝে মাঝে দেশটিতে ভাবমূর্তির সংকট দেখা দেয়, যদিও এর অনেকটা আমরা বিশ্বব্যাপ্ত উগ্রতার অংশ হিসেবে পেয়েছি। এগুলো প্রবাসে বাঙালিকে অপ্রস্তুত করে । সরকার অনেক সময় সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে পারে, কিন্তু টাইমবোমার ওপর বসে বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না।

 

বিতার্কিক বনাম মৌলবাদী
বিতার্কিক বনাম মৌলবাদী

 

এই সংকটকালে বিতার্কিকেরা বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁরা রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের একটা গোলটেবিল বিতর্কে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন । এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম হবে তার সহায়। কারণ মিডিয়ায় বঙ্গীয় কৃষ্টি চেতনা চর্চা সবচেয়ে বেশি। এভাবে সমস্যা মোকাবিলার পথ খোঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে। মৌলবাদের সমসাময়িক বিষয়গুলোর ওপর তাঁরা বেশি বেশি বিতর্কের আয়োজন করতে পারেন। আর এভাবে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণের জন্য কিছু সর্বসম্মত সুপারিশ দিতে পারেন।

বিতার্কিকেরা কথা বলতে পারেন, লিখতে পারেন এবং সংগঠিত করতে পারেন। এই তিনটি কাজ বিবেক জাগিয়ে তুলতে সহায়ক। উন্নয়ন-গন্তব্যে চলমান একটা দেশের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

যেকোনো দেশে সংকট দেখা দেওয়াটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। তবে কেবল একটা গোষ্ঠী সব সময় সেই সংকট দূর করবে, এমন প্রত্যাশা উচিত নয়। বাংলাদেশের বৃদ্ধদের মধ্যে দুর্নীতি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নৈরাশ্যের বিস্তার আছে। তাজা রক্তের অধিকারী নতুন প্রজন্ম দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে গোঁড়ামির বিষ সমূলে উৎপাটনের অভিযান শুরু করতে পারে।

গোঁড়ামি আমাদের উন্নয়নের সম্ভাবনার অনেক ক্ষতি করেছে। বিতার্কিকেরা কখনোই কোনো মধ্যযুগীয় শক্তির সঙ্গে আপস করেন না। কারণ, এসব শক্তি আধুনিক জ্ঞান, সর্বজনীন শান্তি এবং মানবসভ্যতার সুন্দর ভবিষ্যতের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করে।

Leave a Comment