বিতর্ক ও সংগঠন 

আজকে আমরা আলোচনা করবো বিতর্ক ও সংগঠন

 

বিতর্ক ও সংগঠন 
বিতর্ক ও সংগঠন

 

বিতর্ক ও সংগঠন

বিতর্ক কেন, যেকোনো শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে সংগঠনের প্রয়োজন আছে। লেনিন যেমন বলতেন, যেকোনো রাজনৈতিক আদর্শকে এগিয়ে নিতে হলে দুটো বিষয়ের প্রয়োজন সংগঠন ও পত্রিকা। বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশক থেকে আজ পর্যন্ত বিতর্ক যতটুকুই উন্নত হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে অনেক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশনা। আমার সৌভাগ্য হয়েছে বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন বা বিডিএফের প্রথম দিনগুলোতে খানিকটা হাল ধরার। সম্প্রতি বিডিএফ ২৫ বছর পূর্ণ করল। উত্থান-পতনের মধ্যেও সংগঠনটি নেতৃত্বের গণতান্ত্রিক ও নিয়মিত পালাবদল বজায় রেখেছে। এটি বিতর্কজাত যুক্তিবাদিতার প্রমাণ ।

জন্মভূমি সম্পর্কে বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ দুটি শব্দ ব্যবহার করেছেন, মাতার মাতা’। বিডিএফ সম্পর্কেও এককথায় বলা যায়, ‘বিতর্ক সংগঠনের সংগঠন’। জীবদ্দশার সিকি শতাব্দী পার করতে গিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপটার মধ্যে পড়লেও বিডিএফ তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। সে লক্ষ্য হলো বিতর্ককে একটি উদ্বুদ্ধকরণের শিল্প হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা। একটি যুক্তিবাদী সমাজ গঠনের জন্য সাংগঠনিক ক্ষমতাকে সুদৃঢ় ও বিস্তৃত করা বিডিএফের প্রধান কাজা। বন্ধুত্ব ও সামাজিকতা বিডিএফের কর্মমঞ্চ’।

 

বিতর্ক ও সংগঠন 
বিতর্ক ও সংগঠন

 

আজ বিশ্বব্যাপী পরমত অসহিষ্ণুতার ব্যাপকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে বিতর্ক। আজ জাতীয় পর্যায়ে ধর্মান্ধতার উগ্রবাদ যেভাবে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নকে আক্রমণ শুরু করেছে, তার বিপরীতে স্থায়ীভাবে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে বিতর্কচর্চা। একজন বিতার্কিক প্রতিটি অনুষ্ঠানে বিপরীত মতের মানুষকে মোকাবিলা করে। পরমতসহিষ্ণুতা ও অপরের জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন—এই শিক্ষা অর্জনের জন্য বিতর্কের চেয়ে বড় শিল্প আর একটিও নেই।

একটি বৃহত্তর সমাজ বিনির্মাণে রাষ্ট্রকে আরও বড় দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব নেবে সংগঠনগুলোও। বিতর্কের জন্য সরকারকে দিতে হবে, যোগ্য পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। স্কুল তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একটি বিষয় হিসেবে বিতর্ক আবশ্যকীয় করা প্রয়োজন। যদি নাট্যকলার বা চিত্রকলার বিভাগ থাকতে পারে, তাহলে বিতর্কের বিভাগ থাকবে না কেন? বরং এর প্রয়োজন। আরও আগে।

 

বিতর্ক ও সংগঠন 
বিতর্ক ও সংগঠন

 

শুধু বিতর্ক নিয়ে যদি একটি বিভাগ খোলা না যায়, তাহলে বিতর্ক, বক্তৃতা ও সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ (Debate Public Speaking, and Social Motivation) নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ থাকতে পারে, যেখানে অন্য বিভাগগুলোও ছাত্রছাত্রী পাঠাবে। শেষ অংশটি ‘সোস্যাল অ্যাডভোকেসি হলেও ক্ষতি নেই। মোদ্দা কথা, প্রণোদনা বা উদ্বুদ্ধকরণের প্রয়োজন যে সকল শাস্ত্রে অনুভূত হবে, তারাই এই বিভাগের সহায়তা নেবে। যেমন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে স্পোকেন ইংলিশ শেখাচ্ছে— অন্য যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থীরা এর শিষ্যত্ব নিচ্ছে।

রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতির প্রতি গণসচেতনতা বাড়ানো, মনস্তাত্ত্বিকভাবে সমাজকে শুদ্ধ করা ও বাকশিল্পের দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে এখানে ছাত্ররা জড়ো হবে। সরকারও এ বিভাগ থেকে সেবা নিতে সক্ষম হবে। এ বিভাগ নেতৃত্ব ও গণবাণীর ক্ষেত্র তৈরি করবে ।

 

যুক্তিবাদী সমাজ শুধু তর্কচর্চার স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে না, চাই জ্ঞানচর্চার স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার স্বল্পতা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের দৌড়ে আমাদের পশ্চাৎপদতার সর্বোচ্চ কারণ। বিডিএফ এই লক্ষ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। চাই আরও বড় ঐক্য। বিতার্কিকের ঐক্য বড় কঠিন বিষয়। কিন্তু একবার দানা বাধলে তা অশুভ শক্তির জন্য এক ভয়ংকর অস্ত্ৰে পরিণত হয়। তার্কিকেরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে তাদের সহকর্মীদের, যাঁদের সবার চেষ্টায় যেকোনো সংগঠন স্বপ্ন থেকে পরিণত হয় এক সার্থক সাধনায়। বিডিএফ আরও স্বপ্ন বুনন করে এগিয়ে চলুক শতায়ুর পানে। আলোর পথে মুক্তির পানে ।

আমার মুক্তি আলোয় আলোয়…

Leave a Comment