বিতর্কে আবেগ

আজকের আলোচনার বিষয়ঃ বিতর্কে আবেগ

 

বিতার্কিকের লক্ষ্য ও বিকাশপথ
বিতার্কিকের লক্ষ্য ও বিকাশপথ

 

বিতর্কে আবেগ

‘আকাশভরা সূর্য-তারা বিশ্বভরা প্রাণ। এই বিশ্বভরা প্রাণই সব চিন্তার কেন্দ্রীয় লক্ষ্য। পৃথিবীতে আবিষ্কৃত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যের সব শাখাই এই বিশ্বভরা চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। যে অনিবার্য প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বভরা মানবপ্রাণ বিশ্বে অগ্রযাত্রার সাধনা করছে, তার নাম হলো ‘বেগ ও আবেগের সমন্বয়’। সাহিত্যিক যাযাবর বলেছেন, ‘বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ, আছে তাতে গতির আনন্দ, নেই যতির আয়েশ । আসলে আবেগের রূপান্তর ঘটেছে, কিন্তু আবেগকে বিজ্ঞান মানুষের কাছ থেকে আলাদা করতে পারেনি। তা কখনোই সম্ভব নয় ।

এই আলোচনা অবশ্য শুধুই আবেগ নিয়ে নয়। বিতর্কে আবেগ পরিত্যাজ্য কি না, সেটাই আলোচ্য বিতর্ক। বিতর্ক এখনো বাংলাদেশের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাস্ত্র হিসেবে দানা বেঁধে ওঠেনি। বিচারকদের নেই কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা। যাঁর যার নিজস্ব ধ্যানধারণা অনুযায়ী এখনো বিতর্কের বিচার চলছে।

তবে একটা অলিখিত সংবিধানের মতো ‘বিতর্ক বিচারের নীতিমালা’ যুক্তিবাদী বিচারকদের বিবেকের ফল্গুধারায় প্রবাহিত রয়েছে, যার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ন্যূনতম নীতিবোধ এবং সাধারণ জ্ঞান। এ থেকে অধিকাংশ বিচারক একমত অনেক বিচারধারায়। যেমন ১) প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা যাবে না, ২) প্রতিপক্ষকে সরাসরি আক্রমণ বা প্রশ্ন করা যাবে না। করলে তা সভাপতির মাধ্যমে বলতে হবে, ৩) বিতর্ক পরিষদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ কোনো আচরণ করা যাবে না, ৪) কোনোরূপ অবাঞ্ছিত উল্লেখের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের শ্রেণি, ধর্ম, জেন্ডার প্রভৃতিকে হেয় করা যাবে না ইত্যাদি।

বিতর্কের অনেক বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে, রয়ে গেছে বিতর্কিতও। সে রকম একটি বিষয় হলো—বিতর্কে আবেগের ব্যবহার। অনেক বিচারক এবং বিতর্ক-ভাবুক স্পষ্টভাবেই জানান, বিতর্কে আবেগের ব্যবহার নিষিদ্ধ । কারণ, বিতর্ক হচ্ছে যুক্তির দ্বন্দ্ব, আবেগের দ্বন্দ্ব নয়। আবেগ এখানে অবাঞ্ছিত। আবেগ বেশি হলে যুক্তি বিদূরিত হবে, পড়ে যাবে বিতর্কের মান। আবেগের স্থান আছে নাটকে, সংগীতে কিংবা কবিতায়; বিতর্কে নয়।

বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর ‘কবিতা ও বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, যেখানে প্রমাণের প্রয়োজন বিদ্যমান, সেখানে আবেগের স্থান নেই। আরেকটি মতবাদ ‘শ্যাম এবং কূল’ উভয়ই রাখতে চেয়েছে। তাদের মতে, বিতর্কে আবেগের হালকা বা মৃদু ব্যবহার করা যায়। এই মতবাদ নিরেট যুক্তিবাদী এবং আবেগবাদীদের মধ্যে একটা সন্ধির চেষ্টা করেছে। তবে এই হালকা বা মৃদু ব্যবহারের মাত্রা কতটুকু, তা তাঁরা বলেন না। ভাবটা এ রকম, যেন আবেগবাদীদের খানিকটা করুণা করা হলো।

আবেগবাদীরা এই উভয় ধারণাকেই বর্জন করেছেন। যাঁরা বিতর্কে আবেগের ব্যবহারের তীব্র বিরোধী, তাঁরা যথার্থই উগ্রবাদী। দ্বিতীয়ত, যাঁরা করুণা করে আবেগকে খানিকটা আশ্রয় দিতে চান, তাঁরা অস্পষ্টবাদী এবং চিন্তায় শৈথিল্যবাদী। উগ্রবাদী কিংবা শৈথিল্যবাদী – কেউই যথার্থ নন। বিতর্কে আবেগ অনিবার্য।

 

বারোয়ারী বিতর্ক
বারোয়ারী বিতর্ক

 

বিতর্ক যদি একটি শিল্প হয় কিংবা শৈলী হয়, তাহলে এ কথাও মনে রাখতে হবে- পৃথিবীতে কোনো শিল্প বা শৈলীই আবেগবর্জিত নয়, পৃথিবীর এমন কোনো বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি, যা আবেগবর্জিত; এমন কোনো বিখ্যাত ভাষণ সৃষ্টি হয়নি, যার সঙ্গে আবেগের সার্থক মিথস্ক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, এমন কোনো উদ্বুদ্ধকরণ ঘটেনি, যার গভীরতম আসনে আবেগ উদ্দীপকের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত ছিল না। সভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই আবেগ মানুষের চিরবন্ধু, চিরনির্ভর।

বিতর্ক একটি উদ্বুদ্ধকরণের শিল্প। বিতর্কের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নিজের মতামতে অপরকে উদ্বুদ্ধ করা, উজ্জীবিত করা, আত্মদর্শনে অপরকে সঞ্চারিত করা। আব্রাহাম লিংকন তাঁর বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণ’-এ অল্প কথায় মানুষের গণতান্ত্রিক আবেগকে উজ্জীবিত করেছেন। প্রতিটি মানুষই তার আত্মমর্যাদা পেতে চায়, তাকে বড় দায়িত্বে দেখতে চায়। লিংকন গণতন্ত্রের স্বরূপ নির্ণয়ে বললেন, ‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার ও জনগণের জন্য সরকার।

এখানে তিনি সাধারণ মানুষকে সরকারের নির্ণায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে সে ক্ষমতা বা দায়িত্ব দিয়ে গণমানুষকে সম্মানিত করলেন। গণমানুষের একটা আবেগ শোষণ করলেন বলে নিজেও সম্মানিত হলেন । এখানে লিংকনের আবেগ শোষণের কৌশল অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও বুদ্ধিপ্রভ। একই সুরে মানুষের আবেগ শোষণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ, যখন রাজার স্বরূপ নির্ণয়ে বললেন

আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে-
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?

কিংবা ‘রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান। হিটলার জাতীয়তাবাদের অস্তিত্ব রক্ষার যুক্তি দিয়ে নাৎসিদের উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর প্রতিটি ভাষণে এমনকি সম্পূর্ণ হতাশাগ্রস্ত সৈনিকেরা আবার অস্ত্র হাতে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠত। প্রত্যেকের মধ্যেই সৃষ্টি হতো এক তীব্র আবেগ। আসলে হিটলারের ঐন্দ্রজালিক বাকচাতুর্য এবং আবেগের দক্ষ ব্যবহার ক্ষমতা না থাকলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। হিটলার দেশবাসীর লুপ্ত স্বাদেশিকতার আবেগ শোষণ করে উগ্র স্বাদেশিকতা বা শোভেনিজমের আবেগ সৃষ্টিতে সমর্থ হয়েছিলেন।

মার্টিন লুথার কিং তাঁর ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণে শুধু কালোদের নয়, সব আমেরিকানের আবেগ শোষণ করে যুক্তরাষ্ট্রবাসীর চোখে এক ‘আইকন’ হয়ে গেলেন। সেই আবেগ, যুক্তি আর চেষ্টার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হলেন বারাক ওবামা। প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০০৮ সালে শিকাগোতে বিজয় ভাষণ দিয়েছিলেন। অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান মন্তব্য করেন, সে ভাষণ শুনে কারও চোখে যদি জল না আসে, তাহলে বুঝতে হবে তার কোথাও সমস্যা আছে। অতএব, আবেগ অনিবার্য।

 

বারোয়ারী বিতর্ক
বারোয়ারী বিতর্ক

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ একটা জাতিকে স্বাধীনতার আবেগে মাতাল করে তুলেছিল। স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদের আবেগ তখন তিনি তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো রক্ত আরও দেব.. এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ প্রভৃতি বাক্যের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে আবেগ জাগ্রত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। পরে তিনি ক্ষমতায় এসে অনেক ভাষণ দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনোটিই ৭ মার্চের ভাষণের মতো আবেগ সৃষ্টি করতে পারেনি। আবেগ ছিল বলেই এ রকমটি ঘটেছে, যান্ত্রিক যুক্তি থাকলে তা সম্ভব হতো না। বিতর্কের মূল লক্ষ্য যদি উদ্বুদ্ধকরণ হয়, তাহলে এবার আমরা উদ্বুদ্ধকরণ চক্রে অনুপ্রবেশ করি এবং অনুসন্ধান করি এখানে আবেগের স্থানটি কোথায়?

মনস্তত্ত্বে উদ্বুদ্ধকরণ চক্রের ব্যাখ্যা এভাবে ধরা যাক শেষের কবিতার অমিত এবার দার্জিলিংয়ের এক গভীর পার্বত্য অরণ্যে পথ হারিয়ে ফেললেন। এবার তিনি তৃষ্ণার্ত। সৃষ্টি হলো তাঁর মধ্যে পানীয় লাভের তাগিদ। এই তাগিদ তাঁকে নির্দিষ্ট আচরণে বাধ্য করল । তিনি ঝরনাধারার অন্বেষণে এদিক-সেদিক ধাবিত হলেন, যেখানে তাঁর হারিয়ে যেতে নেই মানা। অবশেষে জন কিটস যেমন “চ্যাপম্যানের হোমার গ্রন্থ দেখে আনন্দিত হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি আনন্দিত হলেন অমিত, কারণ তিনি ঝরনাধারার দর্শনলাভ করলেন। তৎক্ষণাৎ পান করলেন তার অমিয়ধারা। তাঁর লক্ষ্য পূর্ণ হলো এবং তিনি লাভ করলেন এর অনাবিল প্রশান্তি, পূর্ণ হলো উদ্বুদ্ধকরণ চক্র।

বিতর্কেও এর সার্থক প্রয়োগ সম্ভব। প্রতি মুহূর্তে নিজের অজান্তেই বিতার্কিক তা প্রয়োগ করছেন। মাত্র ১০ মিনিট পর বিতর্কে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বিতর্কিত একটি বিষয়বস্তু পেলেন, এই মুহূর্তে বিদেশি সাহায্য বন্ধ করা উচিত। পক্ষ-বিপক্ষ নির্ণয় তাঁর ইচ্ছাধীন। এ ক্ষেত্রে পক্ষ-বিপক্ষ নির্ণয়টা হয়ে উঠবে তার অভ্যন্তরীণ তাগিদ থেকে। ধরা যাক, তাগিদ তাকে পক্ষে টেনে নিয়ে গেল।

এই তাগিদের গভীরে সুপ্ত অবস্থায় আছে তীব্র দেশপ্রেমের আবেগ, আছে স্বনির্ভরতার তাগিদ, আছে আত্মমর্যাদার অনুভূতি। এরপর তিনি লিখতে বা ভারতে শুরু করলেন, যা তাঁর আচরণ। এরপর তিনি মঞ্চে এলেন। এবার বক্তার ওপর নির্ভর করছে তিনি কোন ভাষা, ভাব প্রকাশ করবেন। সবারই গভীরে রয়েছে আবেগ, কিন্তু প্রকাশটা সবার একরূপ নয়। বুদ্ধিমান বিতার্কিক আবেগটাকেই যুক্তিতে রূপান্তরিত করেন, মনে করেন এটাই সত্য। উত্তেজিত হন না।

আবেগকে নিয়ন্ত্রিত করেন, শক্তিহীন করেন না, বরং সঠিক পথে বলবান করেন। এবার বিতার্কিক দর্শক-শ্রোতাকে উদ্বুদ্ধ করেন, মুহুর্মুহু হাততালিতে ফেটে পড়ে দর্শক-শ্রোতা, বক্তা লাভ করেন চক্রের চূড়ান্ত উপাদান- প্রশান্তি। সমাপ্ত হয় উদ্বুদ্ধকরণ চক্র।

 

কেউ হয়তো তর্ক করবেন, বিষয়টির পক্ষে আবেগ ব্যবহার করা গেলেও বিপক্ষে আবেগ ব্যবহারযোগ্য নয়। নিরেট যুক্তিই তার সম্বল। সম্পূর্ণ আবেগমুক্ত নিরেট যুক্তির কোনো স্থান বিতর্কে নেই। তার স্থান আছে গণিতশাস্ত্রে, রসায়নে বা অন্যান্য বস্তুতাত্ত্বিক বিদ্যায়। যেমন দুই যোগ দুই সমান চার। কিংবা ‘এইচ- – রাসায়নিক সংকেত মানে পানি। এগুলো বিতর্কের বিষয় নয়। বিতর্ক মানেই সমাজবিজ্ঞান বিষয়াধীন অমীমাংসিত বিদ্যা-সম্পর্কিত বিষয়, যার কেন্দ্রে রয়েছে মানুষ, কোনো সংখ্যা বা ইলেকট্রন নয়। সংখ্যা বা ইলেকট্রনের কথাও বিতর্কে আসবে, কিন্তু তা মানববিদ্যার স্বার্থেই। এই মুহূর্তে বিদেশি সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া উচিত’-এ বিষয়ের বিপক্ষের বক্তাও দক্ষতার সঙ্গে আবেগের ব্যবহার করতে পারেন নিম্নোক্ত ধরনের ভাষণে:

“সম্মানিত সভাপতি, বিপক্ষের বক্তা বিদেশি সাহায্য এই মুহূর্তে বন্ধ করে নিয়ে তার গভীর দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে চাইলেন। কিন্তু তা গভীর দেশপ্রেম নয়, এটা অন্ধ দেশপ্রেম। এটা আত্মঘাতী দেশপ্রেম। তিনি কাব্যিক আবেগের আশ্রয়ে বলেছেন,

মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই
দীন দুখিনী মা যে তোদের, তার যে বেশি সাধ্য নাই।

“কিন্তু যেখানে “মোটা কাপড় ”ই নেই সেখানে কী মাথায় তুলে নেবে? আগে মোটা কাপড় উৎপাদনের ব্যবস্থা তো করতে হবে। তার জন্য আপাতত বিদেশি সাহায্যে কাপড়ের কারখানা গড়ে তুলতে হবে, দেশের মোট বস্ত্রচাহিদা মেটানোর মতো আত্মশক্তি অর্জন করতে হবে এবং তখন বিদেশি সাহায্য বর্জন করতে হবে। বিপক্ষ রবীন্দ্রনাথের “স্বদেশ” পড়েছেন, পড়েননি রবীন্দ্রনাথের “আত্মশক্তি” কবিতা, যেখানে তিনি বিপদ অতিক্রমের জন্য আগে আত্মশকি অর্জনের কথা বলেছেন।

সাঁতার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভেলা ছিনিয়ে নিলে তার মৃত্যু অনিবার্য, কিন্তু সাঁতার শিখে ফেললে ভেলা অপ্রয়োজনীয়। বিদেশি সাহায্য হচ্ছে এই মুহূর্তে জাতির সাময়িক স্যালাইন মাত্র, চিরনির্ভর খাদ্য নয়। বিপক্ষের ধারণা করা উচিত নয়, আমরা বিদেশি সাহায্যের বিপণন এজেন্ট। বিপক্ষের মতো আমরাও বিশ্বাস করি,

মা কি তুই পরের দ্বারে পাঠাবি তোর ঘরের ছেলে?
তারা যে করে হেলা, মারে ঢেলা, ভিক্ষাঝুলি দেখতে পেলে

“কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে আত্মরক্ষা। দেশের শতকরা ১৪ জন সভ্য জীবনযাপনে ব্যর্থ, শতকরা ২৪ জন বাস করছে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে। এ অবস্থায়, হঠাৎ করে এই মুহূর্তে বিদেশি সাহায্য বন্ধ করে আমরা আরেক দুর্ভিক্ষের অভিশাপ নির্যাতিত-শোষিত শতকরা ৫০ জনের দিকে ঠেলে দিতে চাইছি—তার নাম কোন দেশপ্রেম? বিপক্ষ কি ক্ষুধার্ত পাকস্থলীকে দেশপ্রেমের পূর্ণিমাচন্দ্র দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখতে চান?’

পাঠক, লক্ষ করুন, বিপক্ষের বক্তাও কিন্তু সুকৌশলে আবেগ সৃষ্টি করেছেন, যদিও ভাবটা এ রকম রেখেছেন যে, তিনি খুবই বাস্তববাদী, যুক্তিবাদী এবং আবেগতাড়িত হন না। দক্ষ বিতার্কিকের কৌশল এটাই। তিনি গ্রিকদের কাঠের ঘোড়ার মতো আবেগের তোরণ দিয়ে দুর্ভেদ্য ট্রয় নগরীতে প্রবেশ করেন, দর্শক- শ্রোতা ও বিচারকের অন্তরে প্রবেশ করেন, অন্তর জয় করেন, বিজয় নিশ্চিত করেন। হে যাযাবর, বিজ্ঞান এখনো আমাদের আবেগ কেড়ে নিতে পারেনি। পারবেও না, যত দিন আমরা মানুষ।

Leave a Comment