আজকের আলোচনার বিষয়ঃ সংসদীয় বিতর্কের পয়েন্টসমূহ
সংসদীয় বিতর্কের পয়েন্টসমূহ
১. কোন বক্তার বক্তব্যের মাঝখানে বাধা দেওয়া বা Interrupt করার ক্ষমতা সব সদস্যের রয়েছে
২. পয়েন্ট উত্থাপনের মাধ্যমে কাজটি করতে হয়।
৩. পয়েন্ট তিন প্রকার-
১.Point of Order (POO)
২.Point of Privilege (POP)
৩.Point of Information (POI)
৪. Point of Order (POO) (সংসদীয় বিধি ভঙ্গ)
ক. যেসব ক্ষেত্রে তোলা যাবে
- কোন বিতার্কিক নির্ধারিত সময়ের পরও বক্তব্য শেষ না করলে।
ব্যাখ্যাঃ
প্রত্যেক বক্তার জন্য নির্ধারিত যে সময় (৪ মিনিট বা ৫ মিনিট) সে সময় শেষ হবার পরও আরও ১৫ সেকেন্ড বরাদ্দ থাকবে তার বক্তব্য শেষ করার জন্য। শুধুমাত্র ঐ ১৫ সেকেন্ড শেষ হবার পরই POO তোলা যাবে।
- বিতার্কিক যুক্তিখন্ডন পর্বে নতুন যুক্তি উত্থাপন করলে
ব্যাখ্যাঃ
নতুন যুক্তি বলতে কখনোই প্রাসঙ্গিক উদাহরণকে বোঝা হয় না। উদাহরণ অবশ্যই Relevantly যুক্তিখন্ডন পর্বে দেওয়া যাবে, তবে Constructive Speech বা ‘গঠনমূলক পর্বে’ যে Strategy বা মূলনীতি দেওয়া হযেছে এবং যে যুক্তিগুলোর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তার বাইরে যেকোনো যুক্তিকেই নতুন যুক্তি হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে POO উত্থাপন করা যাবে।
- প্রধানমন্ত্রী/বিরোধী দলীয় নেতার বক্তব্যের পর মন্ত্রী/বিরোধী দলীয় উপনেতা প্রস্তাবকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করলে।
ব্যাখ্যাঃ
প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই উত্থাপিত প্রস্তাবটির আঙ্গিক বিশ্লেষণ করবেন এবং যেসব বিষয়ের সংজ্ঞা প্রদান করা আবশ্যক সেসব বিষয়ের সংজ্ঞা প্রদান করবেন। অপরদিকে বিরোধী দলীয় নেতা সংজ্ঞা গ্রহণ না করলে নতুন সংজ্ঞা দিতে পারেন কিংবা তার দলের আঙ্গিক থেকে প্রস্তাবটির মূল সুরের বিরোধিতা করতে পারেন। একবার দু’দলের নেতা যখন সংজ্ঞা বা ‘Strategy’ পরিষ্কার করে ফেলবেন, তারপর অন্য কোন বক্তা নতুন সংজ্ঞা প্রদান কিংবা অন্য কোন আঙ্গিক ব্যাখ্যা (প্রস্তাব সম্পর্কিত) করতে পারবেন না। করলে তা POO এর আওতায় আসবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
সংজ্ঞা পরিবর্তন বা ‘Strategy’ র পরিবর্তন করতে না পারলেও তারা অবশ্যই বিভিন্ন যুক্তি, যুক্তিখন্ডন এবং উদাহরণ ও তত্ত্ব ও তথ্য প্রদান করতে পারবেন।
বিশেষ বিধান রহিতকরণঃ
বিতার্কিক পকেটে হাত রেখে বা আঙ্গুল উচিয়ে কথা বললে Technical Problem তোলার বিধান পূর্বে থাকলেও বর্তমান নীতিমালার মাধ্যমে তা রহিত করা হচ্ছে। তাছাড়া হাউজে কোন Point of Order থাকলে শুরুর পূর্বে তা জানাতে হবে। এজন্য বিতর্কের মাঝখানে Technical Problem তোলা যাবে না।
৫. Point of Privilege (POP)
ক. POP তোলা যাবে
কোন বিতার্কিকের বক্তব্য বিপক্ষের বিতার্কিক ত্রুটিপূর্ণভাবে প্রকাশ করলে বা তার মতামত ভুলভাবে প্রকাশ বা বক্তব্য বিকৃত (Misquote) করলে।
- কোন বিতার্কিক বক্তব্য পেশের সময় বিপক্ষের সদস্যদের প্রতি অবমাননাকর কথা বললে বা ব্যক্তিগত – আক্রমণ করলে।
খ. POP সম্পর্কিত বিশেষ বিধানঃ
যে কোন শব্দ যা শ্রুতিকটু এবং অসংসদীয় বলে প্রতিপন্ন হতে পারে, সেগুলো ব্যক্তিগত এমনকি দলগত আক্রমণের নিমিত্ত ব্যবহৃত হলে POP তোলা যাবে। কিন্তু অন্য কোন ক্ষেত্রে (যেমন বক্তব্যের মাঝখানে কোন ঘটনার উল্লেখ করতে যেয়ে) POP তোলা যাবে না।
গ. দ্রষ্টব্যঃ
POP তোলার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ লক্ষণীয় দিক এরকম যে, যাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা যার বক্তব্যকে Misquote করা হয়েছে তিনিই শুধু POP তুলতে পারবেন, অন্য কেউ নয়। যেমনঃ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য Misquote করলে তিনিই Point তুলবেন, সরকারি মন্ত্রী বা সদস্য নয়।
৬. Point of Information ( POI)
ক. একজন বক্তা বক্তব্য রাখার সময় তার প্রতিপক্ষের কোন বক্তা তার বিরুদ্ধে POI তুলবেন দুটি ক্ষেত্রে-
- যদি তিনি যে বক্তা বক্তব্য রাখছেন, তার বক্তব্যের তথ্যসূত্র জানতে চান।
- যিনি বক্তব্য রাখছেন তার বক্তব্যের একটি ‘নির্দিষ্ট অংশের’ এবং অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট অংশের খুব সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা জানতে চান।
- বক্তব্য প্রদানকারী দলের স্ট্র্যাটেজির সাথে সম্পর্কিত কোনো উদাহরণ জানতে চাইলে।
খ. বিশেষ বিধান রহিতকরণঃ
যে কোন তথ্যসূত্র জানার জন্য POI তোলা যাবে তবে অবশ্যই তা যৌক্তিকভাবে গ্রাহ্য হতে হবে। যেমন- ‘সূর্য পূর্বদিকে ওঠে- এই তথ্যটি আপনি কোথায় পেলেন এধরনের কোন POI উত্থাপিত করা যাবে না।
৭. Point সমূহ উত্থাপনের নিয়মঃ
ক. Point of Order
- স্পীকারের অনুমোদন সাপেক্ষে হাউজে POO উত্থাপিত হবে।
- অবশ্যই উত্থাপিত Point টি ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে হবে।
- যার বক্তব্যের সময় Point টি তোলা হয়েছে তিনি নিজের স্বপক্ষে কথা বলার জন্য ১৫ সেকেন্ড সময় পাবেন।
- পয়েন্টটি গৃহিত না হলে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ব্যবহৃত সময় বক্তার মূল বক্তব্য থেকে বাদ দেওয়া হবে।
- পয়েন্ট গৃহিত হলেও সময় বাদ দেওয়া হবে ।
- পয়েন্ট গ্রহণ কিংবা বর্জন সংক্রান্ত স্পীকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
- Point গৃহিত হলে স্পীকার ‘পয়েন্ট গৃহিত হল’ বা ‘The point is well taken’ অন্যথায় ‘পয়েন্টটি গৃহিত হল না’ বা ‘The point is not well taken’ বলবেন।
- POO গৃহিত হলে নম্বর দলীয় সমঝোতায় যুক্ত হবে।
খ. Point of Privilege
- স্পীকারের অনুমোদন সাপেক্ষে হাউজে POI উত্থাপিত হবে।
- অবশ্যই উত্থাপিত Point টি ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে হবে।
- যার বক্তব্যের সময় Point টি তোলা হয়েছে তিনি নিজের স্বপক্ষে কথা বলার জন্য ১৫ সেকেন্ড সময় পাবেন।
- পয়েন্টটি গৃহিত না হলে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ব্যবহৃত সময় বক্তার মূল বক্তব্য থেকে বাদ দেওয়া হবে। –
- পয়েন্ট গৃহিত হলেও সময় বাদ দেওয়া হবে।
- পয়েন্ট গ্রহণ কিংবা বর্জন সংক্রান্ত স্পীকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।।
- Point গৃহিত হলে স্পীকার ‘পয়েন্ট গৃহিত হল’ বা ‘The point is well taken’ অন্যথায় ‘পয়েন্টটি গৃহিত হল না” বা “The point is not well taken’ বলবেন।
- POI গৃহিত হলে নম্বর দলীয় সমঝোতায় যুক্ত হবে।
গ. Point of Information
- যার কাছে পয়েন্ট তুলতে হবে তিনি বক্তব্য রাখার সময় উত্থাপনকারীকে উচ্চস্বরে Point of – Information উচ্চারণ করে (এক্ষেত্রে মাথায় বাম হাত রেখে ডান হাত সামনে প্রসারিত করা যায়)
- বক্তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে হবে। তিনি শুধুমাত্র Point টি তোলার অনুমতি দিলেই পয়েন্ট তোলা যাবে, অন্যথায় নয় ।
- যার কাছে POI উত্থাপিত হয়েছে, তিনি পয়েন্টটি নিতে চাইলে বলবেন- ‘উত্থাপন করুন’, অন্যথায় ‘গ্ৰহণ করছি না’ বলে নিজের বক্তব্য চালিয়ে যেতে পারেন।
- একবার কোনভাবে পয়েন্ট গ্রহণ করলে তা আর অস্বীকার করা যাবে না। উত্তর না দিলে বা স্থুল উত্তর দিলে নম্বর কাটা যাবে।
- POI সরাসরি বক্তার কাছে তোলা হবে। এতে স্পীকারের কোন ভূমিকা নেই। তবে অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনার ক্ষেত্রে স্পীকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন।
- POI এর প্রশ্নটি ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে হবে। উত্তর দেবার সময় বক্তার মূল সময় থেকে বাদ যাবে।
- POI এ শুধু একটি মাত্র প্রশ্ন করা যাবে। কোনভাবেই উত্তরের প্রেক্ষিতে কোন সম্পূরক প্রশ্ন (Counter argument) করা যাবে না। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে তা পরবর্তীতে আরেকটি চঙও এর মাধ্যমে উত্থাপন করা যাবে। তবে তা গ্রহণ করা বা না করা বক্তার উপর নির্ভর করে।
- POI গ্রহণ করার ব্যাপারটি ঐচ্ছিক তবে একজন বক্তাকে অন্তত দুটি চঙও গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
- POI উত্থাপনের নম্বর দলীয় সমঝোতায় যুক্ত হবে এবং উত্তর প্রদানের নম্বর ব্যক্তিগত নম্বরে যুক্ত হবে।
৮. যুক্তিখন্ডন পর্বে কোন ধরনের Point of Information তোলা যাবে না।
৯. যুক্তিখন্ডন পর্বে Point or Order এবং Point of Privilage তোলা যাবে।
১০. যে কোন বক্তার গঠনমূলক পর্বের বক্তব্য প্রদানের প্রথম ও শেষ মিনিট কোন পয়েন্ট তোলা যাবে না।
১১. যুক্তিখন্ডন পর্বে শেষ মিনিটে কোন পয়েন্ট তোলা যাবে না।
আরও দেখুনঃ